তামাদি অর্থ ‘যে অধিকারের বা যে দাবির নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে’। তামাদি আরবী শব্দ। ইংরেজিতে একে ‘লিমিটেশন’ বলে, সম্ভবত এ কারণে যে, সময় চলে যাওয়ার পর কোনো অধিকারের দাবীতে মামলা করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরী হয়। তামাদি আইন মূলত দেওয়ানী মামলার মেয়াদ সংক্রান্ত আইন।
১৭১৩ সালে সর্বপ্রথম ইংরেজি তামাদি আইন প্রবর্তন হতে শুরু করে। প্রথমে খন্ডাকারে এবং পরবর্তীতে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে এ বিষয়ে পুর্নাঙ্গ আইন প্রণীত হয় (১৮৫৯ সালের ১৪ নং আইন)। ১৮৭৭ সালে আবার সেই আইন সংশোধন হয়। অবশেষে প্রণীত ১৯০৮ সালের তামাদি আইনই বর্তমানে অনুসরণ করা হয়।
তামাদি আইন সম্পর্কে গাজী শামসুর রহমান তাঁর ‘তামাদি আইনের ভাষ্য’ গ্রন্থে বলেছেন, তামাদি আইন হলো শান্তির আইন, বিরামের আইন। তামাদি আইন মালিকানার দ্বন্দ্বকে শান্ত করে, প্রতারণা রোধ করে। পুরাতন হয়ে যাওয়ার কারণে যে অধিকার প্রমাণে দৌর্বল্য সৃষ্টি হয়, সেই দৌর্বল্যে এই আইন পুষ্টির যোগান দেয়।
গাজী শামসুর রহমান তাঁর পূর্বোক্ত গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, যে দাবি বা অধিকার সবদিক দিয়ে নিখুঁত, তামাদি সম্পর্কে সচেতনতার কারণে তা চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বিচারক বা আইনজীবির জন্য শুধু নয়, সকল সংসারী মানুষের জন্য তামাদি আইনের জ্ঞান থাকা জরুরী।
কর্জ দেওয়া টাকা আদায় করার জন্য বা বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আশ্রয় নেওয়া যায়, সেই সময়সীমা পার হয়ে গেলে টাকা আদায় বা জমি উদ্ধারের অধিকার তামাদিতে বারিত হয়ে যায়।
তামাদি আইন ধরে নেয়, যার দাবি সত্য সে দাবি আদায়ের জন্য তৎপর হয়, বিপরীতভাবে যার তৎপরতার অভাব প্রতীয়মান হয় তামাদি আইন মনে করে তার দাবির মধ্যে সমস্যা বা গণ্ডগোল আছে। সুতরাং তামাদি আইন বিধান দেয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে তৎপর না হলে সে দাবি আদায়ের অধিকার আর থাকা সঙ্গত নয়।
তামাদি আইনের উপরোক্ত সতর্কবার্তা অধিকার সম্পর্কে যথাসময়ে সতর্ক হওয়ার তাগিদ দেয়। কোনো প্রশ্ন, তর্ক বা বিবাদকে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখা সমাজের জন্যও নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। সমাজের শৃঙ্খলার স্বার্থে অনন্ত বিতর্কের একটা অবসান হওয়া উচিত। তামাদি আইন সেই অবসানকে তরান্বিত করার ব্যবস্থা করে।
তামাদি আইনে প্রণীত বিধানসমূহের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, দীর্ঘদিন জিইয়ে রাখা বিবাদ আরও জিইয়ে রাখার পথে বাঁধা সৃষ্টি করা। তামাদি আইন জানায়, কোন সমস্যায় কতদিন পর্যন্ত প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়, কতদিন পর আর প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ থাকে না। তামাদি আইন কারও অধিকার নিশ্চিত করে দেয় না, কেবল অধিকার আদায়ের জন্য তৎপর হওয়ার সময়সীমা ঠিক করে দেয়। তামাদি আইন অধিকারের জন্য কাউকে মামলা করতে বলে না বরং জানিয়ে দেয় একটা সময়সীমার পর আর মামলা করা চলবে না।
অনেকেই মনে করতে পারেন, তামাদি আইনের এই জবরদস্তিমূলক সময়সীমা নির্ধারণ আইনের নীতি বিরোধী, কেবলমাত্র তামাদির অজুহাতে সৎ এবং ন্যায় দাবিকে নস্যাৎ করে দেওয়া সততার পরিচায়ক নয়। এই অভিযোগ যথার্থ হবে না। কারণ, এমন অনেক সমস্যা আছে, একবার শুরু হলে যা আর শেষ হতে চায় না, সমগ্র অন্তর দিয়ে মানুষ তা থেকে যত দ্রুত পারা যায় তত দ্রুত মুক্তি কামনা করে, তামাদি আইন সেই ব্যবস্থাই করে। পৃথিবীর সব দেশে তামাদি আইন বিদ্যমান।
চলুন দেখা যাক কী বলে তামাদি আইন (লিংক যুক্ত হবে)।